সংবাদচর্চা রিপোর্ট
মাস শেষ হতে চলেছে। এসময় কি হাতে টাকা থাকে? ধার করে চলতে হচ্ছে। মাছ-মাংস এখন শুধুই বিলাসিতা। কোনো রকমে খেয়ে বাঁচা। কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা কামাল আহমেদ। পেশায় ব্যাংকার হয়েও নিত্যপণ্যের চড়া দামের সাথে তাল মিলাতে পারছেন না তিনি।
শুধু কামাল কেন, ভোগ্যপণ্যের যে দাম তার সাথে তাল মিলাতে পারছেন না প্রায় সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রতিটি পরিবারই এখন মিতব্যয়ী। তবুও মিলছে না সমাধান। মাস শেষ হওয়ার আগেই সংসারে চলে টানাটানি। এ সময় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) শহরের দিগুবাবুরবাজার, কালীরবাজারসহ সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পর গত দুই সপ্তাহ ধরে নারায়ণগঞ্জের বাজার গুলোতে কমছে ডিম ও মুরগির দাম। তবে বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি, মাছ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ভোজ্যতেলের দাম । এ ছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে আটা ও ভোজ্যতেলের দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। তবে ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে গেছে। খামারি পর্যায়ে ১৩৫-১৩৫ টাকা দাম হলেও তা খুচরা বাজারে এসে ১৬৫ টাকা কেজি হয়ে যায়।
দিগুবাবু বাজারের ডিম ব্যবসায়ী সেলিম মাহমুদ বলেন, ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৩৮ টাকা টাকা আর সাদা ডিম ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করছি।
মাছের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। দেখা যায়, মাছের বাজারে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বড় ইলিশ ১৭০০ টাকা ও ছোট ইলিশ ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০০ টাকা বেড়ে বড় চিংড়ি ২ হাজার টাকা ও দেশি চিংড়ি ১০০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আইড় মাছের দাম ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা, ২০০ টাকা বেড়ে গুচি ১২০০ টাকা, ১০০ টাকা বেড়ে বাইং মাছ ৮০০ টাকা ও ৩০ টাকা বেড়ে রুই মাছ ২৫০ টাকা ও সিলভার কার্ফ ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পাবদা মাছের দাম, বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে।
দিগুবাবু বাজারের মাছ কিনতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আগে যা বেতন পেতাম এখনো তাই। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আজ মাছের বাজারে এসে তো পুরোপুরি মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা।
গত সপ্তাহের তুলনায় আজ মাছের দাম কেজিতে ৩০-২০০ টাকা বেড়েছে। এভাবে যদি প্রতি সপ্তাহে মাছের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের মাছ খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।
ফারজানা আক্তারও মাছ কিনতে এসে পড়েছেন বিপাকে। তিনি বলেন, বাজারে এসে দেখি গত সপ্তাহের চেয়ে মাছের দাম আবার বেড়ে গেছে। কিছু বলার নাই। তাই যেখানে দুই কেজি মাছ কিনতাম সেখানে হয়তো এক কেজি কিনবো। আমাদের খেয়ে তো বাঁচতে হবে।
দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে মাছ বিক্রেতা কাশেম মিয়া বলেন, বৃষ্টি ও মেঘের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। ফলে বাজারে মাছ কম আসছে। আর আমদানি কম থাকার কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী মাছ সরবরাহ করতে পারছি না। তাই মাছের দামটা একটু বেশি।
এদিকে, মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কমেছে। দিগুবাবু বাজারের মুরগি দোকানদার আলী হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৫ টাকা কমে ১৬৫ টাকা কেজি, অপরিবর্তিত থেকে সোনালী মুরগি ২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা কমে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা হালি এবং সাদা ডিম ৩৬ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আদার দাম পড়ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা আবং প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি মসুরের ডাল ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় মসুর ডালের দাম লাগছে ১১০ টাকা।
খোলা আটার দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায়। ২ কেজির প্যাকেট আটার দাম পড়ছে ১১৫ টাকা। এ ছাড়া বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৭ টাকা বাড়ানোর পর আগের চেয়ে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে সবজির বাজার অপরিবর্তিত থাকলেও কিছু কিছু সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান বিক্রেতারা। বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া ফুলকপি ১০০ টাকা, করলা ৬০, আলু ৩০, শসা ১০০, টমেটো ১২০ এবং কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে।
অপরিবর্তিত থেকে গরু ও খাশির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা ও ৮৫০ টাকা কেজিতে।